স্বদেশ ডেস্ক:
সৌদি আরব থেকে ৬ মাসের ছেলেসন্তান নিয়ে গত মঙ্গলবার সকালে দেশে ফেরেন বছর বত্রিশ-পঁয়ত্রিশের এক নারী শ্রমিক। ভাগ্য বদলের আশায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে মরুর দেশে পাড়ি জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই দরিদ্র নারী। তবে শুরু থেকেই শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি শিকার হন গৃহকর্তার যৌন লালসার। একপর্যায়ে গর্ভে আসে সন্তান। কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি। বাধ্য হয়েই শিশুটিকে নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে।
লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ি ফিরতে চান না ওই নারী শ্রমিক। উপায়ান্তর না পেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই বিষয়টি জানান আর্মড পুলিশকে। পরে শিশু ও মাকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হন্তান্তর করা হয় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কাছে। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে অবস্থান করছেন। ভিকটিম ওই নারী জানান, সৌদি আরব যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হতেন। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সৌদির কারাগারেই তার সন্তানের জন্ম হয়। তার ভাষ্য, ‘আমার পরিবারের কেউ বিষয়টি এখনো জানে না। তাই সন্তানকে নিয়ে আমি পরিবারের কাছে ফিরতে পারব না। বিষয়টি ভালোভাবেও নেবে না সমাজের লোকেরা।’
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সৌদি আরবের কোন বাড়িতে তিনি কাজ করতে গিয়েছিলেন, তার নিয়োগকর্তা কে- এগুলো তদন্ত করা জরুরি। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করে সন্তানের পিতৃপরিচয় বের করা যেতে পারে। এর আগে আমরা এ ধরনের ১২টি ঘটনা দেখেছি। তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।’
এর আগে গত ২৬ মার্চ সৌদি আরব থেকে সন্তান দিয়ে দেশে ফেরেন নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার এক কুমারী তরুণী। পাশবিক নির্যাতনে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়েছেন। মক্কাস্থ কেন্দ্রীয় কারাগারে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থাতেই তিনি জন্ম দেন পুত্রসন্তানের। গত ২ এপ্রিল
আট মাসের শিশুসন্তানকে বিমানবন্দরে ফেলেই চলে গেছেন সৌদি ফেরত আরেক মা। হয়তো-বা লোকলজ্জার ভয়েই তিনি ফেলে যান নাড়িছেঁড়া সেই ধন। ২৪ ফেব্রুয়ারি চার মাসের মেয়েসন্তান নিয়ে ওমান থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হন এক নারী গৃহকর্মী। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ অফিসে গিয়ে তিনি জানান, এক ওমানীর নির্যাতনে একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পর ওমান ডির্পোটেশন ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় তার সন্তানের জন্ম হয়। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওমান থেকে হবিগঞ্জের আরেক গৃহকর্মী তিন মাসের সন্তানসহ দেশে ফিরতে বাধ্য হন।